ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন-সম্পূর্ণ গাইড

 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সম্পূর্ণ গাইড! অনলাইনে বা সরাসরি নির্বাচন অফিসে আবেদন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফি এবং সময়সীমা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। দ্রুত ও সহজ পদ্ধতিতে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন করুন।

ভোটার-আইডি-কার্ড-সংশোধন
নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা বা ছবি পরিবর্তন করতে চান? এনআইডি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, আবেদন পদ্ধতি ও ফি সম্পর্কে জানতে আমাদের গাইড পড়ুন। সহজ স্টেপ-বাই-স্টেপ প্রসেস অনুসরণ করে আজই আবেদন করুন।

পেজ সূচিপত্রঃ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন-সম্পূর্ণ গাইড 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন-সম্পূর্ণ গাইড 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন-সম্পূর্ণ গাইড। ভোটার আইডি কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ নথী। যা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যবহৃত হয়। তবে অনেক সময় ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা বা ছবি ভুল থাকায় সংশোধনের প্রয়োজন হয়। এই প্রক্রিয়াটি সহজ করতে নির্বাচন কমিশন অনলাইন ও সরাসরি আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে।

এনআইডি কার্ডে ভুল তথ্য থাকলে ব্যাংকিং, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা নিতে সমস্যা হতে পারে। তাই সঠিক নিয়ম মেনে দ্রুত এনআইডি কার্ড সংশোধন করা জরুরি। এই গাইডে এনআইডি সংশোধনের সম্পন্ন পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হল।

আরো পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড লোন পদ্ধতি - সম্পূর্ণ গাইড

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র দরকার হয়, যা সংশোধনের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বা সরকারি গ্যাজেট, জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ বা এসএসসি সনদ,

ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের সনদ এবং ছবি পরিবর্তনের জন্য সদ্য তোলা ছবি ও আগের এনআইডি আইডি কার্ড প্রয়োজন হয়। এসব কাগজপত্র নির্বাচন কমিশন অফিসে বা অনলাইনে আবেদন করার সময় জমা দিতে হয়।

ভুলের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আলাদা হয়ে থাকে। নিচে সংশোধনের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো দেওয়া হলো;

সংশোধনের ধরন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
নাম সংশোধন শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট (যদি থাকে), সরকারি গেজেট (প্রয়োজনে)
বাবা/মায়ের নাম সংশোধন অভিভাবকের জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধনের সনদ
জন্ম তারিখ সংশোধন জন্মবন্ধন সনদ এসএসসি বা এইচএসসি সনদ, পাসপোর্ট (যদি থাকে)
ঠিকানা সংশোধন ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন সনদ, বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ
ছবি পরিবর্তন সদ্য তোলা ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড), আগের ভোটার আইডি কার্ড
অন্যান্য তথ্য সংশোধন সংশ্লিষ্ট তথ্যের সমর্থনে উপযুক্ত সরকারি দলিল

বি দ্রঃ প্রয়োজনে কাগজপত্রের তালিকা পরিবর্তিত  হতে পারে তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন।

এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হয়, যা সংশোধনের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য ৩৬৫ টাক্‌ ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ২৩০ টাকা, ছবি পরিবর্তন এর জন্য ২৩০ টাকা এবং হারানো বা নতুন আইডি, তুলতে ৩৬৫ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংশোধনের জন্য আবেদন করার সময় এই ফি মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক বা নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত পেমেন্ট ক্যাটাগরি এর মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। তবে জরুরী ভিত্তিতে সংশোধন করতে চাইলে অতিরিক্ত ফি লাগতে পারে, যা নির্দিষ্ট সময় ও সার্ভিস এর উপর নির্ভরশীল।

ফি সংক্রান্ত তথ্য সময় অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে, তাই সর্বশেষ আপডেটের জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম (২০২৫)

এনআইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার নিয়ম

এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য দুটি পদ্ধতি রয়েছেঃ অনলাইনে আবেদন এবং সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন।

ভোটার-আইডি-কার্ড-সংশোধন


অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি

  • nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে যান
  • "NID সেবা" অপশনে ক্লিক করে লগইন করুন (জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে)
  • "তথ্য সংশোধন" অপশন সিলেক্ট করুন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন নির্বাচন করুন
  • সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করুন
  • নির্ধারিত ফ্রি পরিশোধ করুন (যদি প্রয়োজন হয়)
  • আবেদন সাবমিট করুন এবং সনদ নম্বর সংরক্ষণ করুন

সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন

  • নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান
  • সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে সঠিকভাবে পূরণ করুন
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে জমা দিন
  • সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফ্রি পরিশোধ করুন
  • নির্বাচন কমিশনার আবেদন যাচাই করার পর সংশোধিত এনআইডি সংগ্রহ করুন
বি দ্রঃ সাধারণত সংশোধনের জন্য ১৫-৩০ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে। আবেদন স্ট্যাটাস জানতে ওয়েবসাইট চেক করুন বা স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন।

ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্রে  জন্ম তারিখ ভুল থাকলে তা সংশোধন করা জরুরী, কারণ এটি ব্যাংকিং, পাসপোর্ট। শিক্ষা ও সরকারি সেবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি ইতি মধ্যে উপরে জানানো হয়েছে।

জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য অনলাইনে বা সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে আবেদন করা যায়। আবেদন করার পদ্ধতি একই রকম। সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ কার্য দিবস সময় লাগে। তবে দ্রুত সেবা পেতে আগে থেকে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করা ভালো।
ভোটার-আইডি-কার্ড-সংশোধন
বি দ্রঃ ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে, তাই সঠিক ডকুমেন্ট সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক।

ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধনের জন্য প্রথমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। সাধারণত, নাম সংশোধনের জন্য সরকারি গেজে্‌ বয়সের প্রমাণপত্র, এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। যদি আপনার নামের বানান ভুল থাকে, তাহলে সংশোধন করতে শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ,

যেমন এসএসসি বা এইচএসসি সনদপত্রও জমা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কিত অন্যান্য সরকারের ডকুমেন্টও দরকার হতে পারে। এই কাগজপত্র নির্বাচন অফিসের জমা দিতে হবে বা অনলাইনে আপলোড করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি দেখতে  এখানে চাপুন।

নাম সংশোধনের আবেদন জমা দেওয়ার পর, নির্বাচন কমিশনার আবেদনটি যাচাই করে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। সাধারণত, এটি ১৫-৩০ কার্যদিবস সময় নিতে পারে। আবেদন অনুমোদিত হলে, সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড আপনাকে পোস্টের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। যদি আপনি দ্রুত সংশোধন চান, তাহলে এক্সপ্রেস প্রসেসিং সার্ভিসের মাধ্যমে এটি করতে পারেন।

তবে এর জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হতে পারে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা আবেদনের যাচাইয়ের জন্য গেজেট বা অন্যান্য ডকুমেন্ট যাচাই করতে পারেন। এছাড়া, নাম সংশোধন করতে গিয়ে যদি কোন বিশেষ সমস্যা দেখা দেয্‌ তবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে সহায়তা নেওয়া যায়।

জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্যান্য তথ্য সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্যান্য তথ্য সংশোধন করতে হলে, সংশোধনের ধরন অনুযায়ী আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে। যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা, জন্ম তারিখ, ছবি বা অভিভাবকের নাম ভুল থাক্‌ তাহলে এই তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।

ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য আপনাকে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে সনদপত্র বা হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ জমা দিতে হবে। একইভাবে, যদি আপনার ছবি পরিবর্তন করতে চান তবে নতুন ছবি আপলোড করতে হবে এবং আগের আইডি কার্ডের একটি কপি জমা দিতে হবে।

অন্যদিকে, জন্মতারিখ বা অভিভাবকের নাম সংশোধন করার জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ বা শিক্ষাগত সনদপত্র জমা দিতে হতে পারে। এই সংশোধনের জন্য আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারেন, যেখানে আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার ও সংশোধিত তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে।

অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি দেখতে  এখানে চাপুন। সংশোধন প্রক্রিয়া শেষে সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড গ্রহণ করার জন্য আপনাকে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিশ্চিতকরণের পর তা সংগ্রহ করতে হবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের ফি নির্ভর করে সংশোধনের ধরন ও বিতরণ পদ্ধতির ওপর। সঠিক ফি নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ফি হিসাব করার সিস্টেম রয়েছে। এখানে আমরা জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, আবেদন ও বিতরণ পদ্ধতি নির্বাচন করে নির্ধারিত ফি সম্পর্কে জানতে পারি। নিচে সংশোধনের ধরন অনুযায়ী ফি টেবিল আকারে দেওয়া হলো;
সংশোধনের ধরন ফি (টাকা)
নাম সংশোধন ৩৬৫
জন্ম তারিখ সংশোধন ৩৬৫
ঠিকানা সংশোধন ২৩০
ছবি পরিবর্তন ২৩০
হারানো আইডি পুনরুদ্ধার ৩৬৫
অন্যান্য তথ্য সংশোধন ২৩০

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর

১) যদি ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য ভুলভাবে সংশোধন করা হয়, তাহলে কি করব?
উত্তরঃ যদি কোন ভুল সংশোধন হয়ে যায়, তাহলে পুনরায় সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এমন ক্ষেত্রে নতুন করে সংশোধন করতে পারে। আমরা ওয়েবসাইটে বা স্থানীয় অফিসে গিয়ে পুনরায় আবেদন করতে পারি।

২) ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে কি করতে হবে?
উত্তরঃ ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে আমরা অনলাইনে বা নির্বাচনী অফিসে গিয়ে হারানো কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারি। হারানো আইডি কার্ড পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের নির্ধারিত ফ্রি পরিশোধ করতে হবে।

৩) কি কারনে ভোটার আইডি সংশোধন আবেদন বাতিল হতে পারে?
উত্তরঃ ভোটার আইডি সংশোধন আবেদন বাতিল হতে পারে, যদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেওয়া হয়, ভুল তথ্য প্রদান করা হয় বা ফি পরিশোধ না করা হয়। এছাড়া, নির্বাচনী কর্মকর্তারা আবেদন যাচাই করার পর যদি কোন অসংগতি পান, তবে সংশোধন আবেদন বাতিল হতে পারে।

৪) ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন কোথায় করতে হবে?
উত্তরঃ আমরা অনলাইনে ওয়েবসাইটে আবেদন করতে পারি অথবা আমাদের নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সরাসরি আবেদন করতে পারি।

আমাদের শেষ কথা

ভোটার আইডি সংশোধনের জন্য সঠিক নিয়ম জানা জরুরি। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন-সম্পূর্ণ গাইড এর এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি, কিভাবে আমরা আমাদের এনআইডি সংশোধন করতে পারি, কি কাগজপত্র লাগবে এবং কত টাকা ফি দিতে হবে।

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করুন। পোস্টটি শেয়ার করুন যাতে অন্যরাও উপকৃত হয়!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মতামত আমাদেরকে সাহায্য করবে আরো সুন্দরভাবে আপনাদের সেবা দেওয়ার জন্যে ।

comment url